জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য নিযুক্ত ত্রাণ কার্যক্রম সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ)-কে নিষিদ্ধ করে একটি আইন পাস হয়েছে ইসরায়েলি পার্লামেন্টে। সোমবার (২৮ অক্টেবার) দেশটির সংসদে এই আইন পাস হয়। এই বিলের পক্ষে ৯২ ভোট এবং বিপক্ষে ১০ ভোট পড়ে। আজ মঙ্গলবার তুর্কি বার্তা সংস্থা আনাদোলু এজেন্সি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নতুন এই আইন পাসের ফলে ইসরায়েল ও ইসরায়েল অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমে আর কার্যক্রম চালাতে পারবে না জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ। আইনটি ৯০ দিনের মধ্যে কার্যকর হবে।
ইসরায়েলের এ পদক্ষেপ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে পশ্চিমা দেশগুলো। তাদের আশঙ্কা, গাজায় এখন যে মানবিক সংকট চলছে এতে পরিস্থিতি আরও অবনতি হবে।
বিলটি পাসের পর ইসরায়েলি আইনপ্রণেতা ইউলি এডেলস্টেইন দাবি করেন, হামাসের সঙ্গে ইউএনআরডব্লিউএ’র একটি গভীর সংযোগ রয়েছে, যা ইসরায়েল কখনোই মেনে নেবে না। ইসরায়েলি আরেক আইনপ্রণেতা বোজ বিসমুথ বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একাংশ ইউএনআরডব্লিউএকে যেভাবে দেখে, ইসরায়েলিরা সেভাবে দেখে না।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী ইউএনআরডব্লিউএ-এর কর্মীদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
তবে সংস্থাটির প্রধান ফিলিপ লাজারিনি বলেছেন, ইসরায়েলি সংসদে হওয়া ভোটটি জাতিসংঘ সনদবিরোধী এবং আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। এটি ইউএনআরডব্লিউএ-কে অমর্যাদাপূর্ণ করার এবং ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের মানব উন্নয়নে সহায়তা ও সেবাদান প্রক্রিয়া অগ্রাহ্য করার চলমান প্রচেষ্টার সর্বশেষ পদক্ষেপ।
সোমবার একটি যৌথ বিবৃতিতে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বিশেষ করে গাজার মানবিক সঙ্কটের কারণে ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করে আইনটি বন্ধ করার জন্য ইসরায়েলকে আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমরা ইসরায়েল সরকারকে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছি যে, এই আইন নিয়ে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। কারণ গাজার সাধারণ মানুষদের মানবিক সহায়তা প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ইউএনআরডব্লিউএ। এই সংকটের মধ্যে তাদের বিকল্প কেউ হতে পারে না। তাই, আমরা ইসরায়েল সরকারকে অনুরোধ করছি এই আইন বাস্তবায়ন স্থগিত করতে।
জাতিসংঘের মতে, গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে ভূখণ্ডের ৮৫ শতাংশ বাসিন্দা অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। সেই সঙ্গে অঞ্চলটির ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।
জাতিসংঘ আরও বলছে, দীর্ঘ সময় ধরে চলা সংঘাতের কারণে মানবিক সংকটে দিন পার করছেন ফিলিস্তিনিরা। উপত্যকাটির ২৩ লাখেরও বেশি বাসিন্দা চরম ক্ষুধা ও ভয়াবহ অপুষ্টিতে ভুগছেন।