যুক্তরাষ্ট্রের বহুল প্রতীক্ষিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আজ। এই নির্বাচনেই ঠিক হতে চলেছে কমলা হ্যারিস নাকি ডোনাল্ড ট্রাম্প- কে হতে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট? সেটি নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা, মেলানো হচ্ছে নানা সমীকরণ।
ভারতের হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, ‘ডেমোক্র্যাট স্টেট’ বাবদ কমলা হ্যারিস ২২৬টি ইলেক্টোরাল কলেজ পেতে পারেন বলে প্রায় নিশ্চিত।অন্যদিকে ‘রিপাবলিকান স্টেট’ থেকে ২১৯টি ইলেক্টোরাল কলেজ পেতে পারেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বাকি সাত রাজ্যের ৯৩টি ইলেক্টোরাল কলেজের জন্যেই আসল লড়াই।
২০১৬ সালে যখন ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথমবারের মতো মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন, তখন তিনি ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের থেকে কম ভোট পেয়েছিলেন। একইভাবে এবারও কমলা হ্যারিসের থেকে কম ভোট পেলেও নির্বাচনে জিততে পারেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু কীভাবে?
ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বেশ কিছু প্রদেশে একছত্রভাবে আধিপত্ব বজায় রেখেছে কোনো এক রাজনৈতিক দল। যেমন নিউইয়র্ক, ক্যালিফর্নিয়ার মতো প্রদেশে জিতে আসে ডেমোক্র্যাটরা। আবার টেক্সাস ঐতিহাসিকভাবে রিপাবলিকানদেরই। এ কারণে ‘সুইং স্টেটগুলির’ (নর্থ ক্যারোলাইনা, জর্জিয়া, অ্যারিজোনা, নেভাদা, উইসকনসিন, মিশিগান এবং পেনসিলভেনিয়া) ওপর বেশি নজর থাকে নির্বাচনের ফলাফলের জন্যে। কারণ, নির্বাচনের মোড় ঘোরাতে পারে এই সাতটা প্রদেশের ফল। এই পরিস্থিতিতে একজন প্রার্থী সার্বিকভাবে সারা দেশে প্রতিদ্বন্দ্বীর থেকে কম সংখ্যক ভোট পেয়েও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিতে যেতে পারেন।
লড়াই আসলে ৯৩ ইলেক্টোরাল কলেজের
‘ডেমোক্র্যাট স্টেট’ বাবদ কমলা হ্যারিস ২২৬টি ইলেক্টোরাল কলেজ পেতে পারেন বলে প্রায় নিশ্চিত এবং ‘রিপাবলিকান স্টেট’ থেকে ২১৯টি ইলেক্টোরাল কলেজ পেতে পারেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বাকি সাত রাজ্যের ৯৩টি ইলেক্টোরাল কলেজের জন্যেই আসল লড়াই। এবার যদি সারাদেশে ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে রিপাবলিকানদের তুলনায় বেশি ভোট পড়ে, কিন্তু এই ‘সুইং স্টেট’-এ অল্প ব্যবধানেও ডোনাল্ড ট্রাম্প বাজিমাত করতে পারেন, তাহলে তিনি ফের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে পারেন। আসলে একেক রাজ্যের হাতে একেক সংখ্যক ইলেক্টোরাল কলেজ থাকার ফলেই সার্বিকভাবে বেশি ভোট না পেয়েও কোন এক প্রার্থী জয়ী হতে পারেন নির্বাচনে।
ইলেক্টোরাল কলেজ ব্যবস্থা কী?
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি প্রদেশের প্রতিটির জন্যে নির্ধারিত আছে নির্দিষ্ট সংখ্যক ইলেক্টোরাল কলেজ বা ভোট। আমেরিকায় মোট ইলেক্টোরাল কলেজ ৫৩৮। অর্থাৎ যে প্রার্থী ২৭০ ইলেক্টোরাল কলেজ পাবেন তিনি জয়ী হবেন। তবে মাইন ও নেব্রাস্কা ছাড়া প্রতিটি প্রদেশেরই সব ইলেক্টোরাল কলেজ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে দেওয়া হয় সেই রাজ্যের জয়ী প্রার্থীকে।
উদাহরণস্বরূপ, ক্যালিফোর্নিয়ার হাতে রয়েছে ৫৪টি ইলেক্টোরাল কলেজ। সেই রাজ্যে যে ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পাবে, তার ঝুলিতেই সব ইলেক্টোরল কলেজ যাবে। এখানে যদি দেখা যায়, ভোটের অনুপাতে ট্রাম্পের ঝুলিতে ২০টি ইলেক্টোরাল কলেজ যাওয়া উচিত এবং কমলা হ্যারিসের ঝুলিতে যাওয়া উচিত বাকি ৩৪টি, তাতে ফলাফলে কোনো হেরফের হবে না। প্রদেশে এগিয়ে থাকার ফলে ক্যালিফোর্নিয়ার ৫৪টি ইলেক্টোরাল কলেজই পাবেন কমলা হ্যারিস। অর্থাৎ সেই রাজ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ ইলক্টোরাল কলেজ পাওয়ার ফলে সবকটি ইলেক্টোরাল কলেজই যাবে ডেমোক্র্যাটদের খাতায়। তবে শুধুমাত্র মাইন ও নেব্রাস্কা প্রদেশে যে যেটা ইলেক্টোরাল কলেজে জয়ী, সে সেই সংখ্যক ইলেক্টোরাল কলেজই পাবেন।
এর আগেও কম ভোট পেয়ে নির্বাচনে জিতেছেন যারা
২০১৬ সালে ট্রাম্প হিলারি ক্লিনটনের থেকে ৩০ লাখ ভোট কম পেয়েছিলেন। এদিকে তার আগে ২০০০ সালে রিপাবলিকান প্রার্থী জর্জ ডাব্লু বুশ পাঁচ লাখ কম ভোট পেয়েছিলেন ডেমোক্র্যাট প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাল গোরের থেকে। এর আগে আর মাত্র তিনজন সাধারণ ভোটে না জিতেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। তবে সেই প্রতিটি ঘটনাই উনবিংশ শতাব্দীতে ঘটেছিল।