ইসরাইলের সেই বিমান ঘাঁটিতে ইরানের মুহুর্মুহু ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

দখলদার ইসরাইলে নজিরবিহীন ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করেছে ইরান। তাদের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রের ৯০ শতাংশ নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে বলে জানিয়েছে ইরানের ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড।

মঙ্গলবার হামলার পর বেশ কয়েকটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ হয়েছে। এর মধ্যে একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, ইসরাইলের নেভাতিম বিমান ঘাঁটিতে কয়েক ডজন মিসাইল আঘাত হেনেছে।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন হামলার দুটি ভিডিও বিশ্লেষণ করে এ তথ্য জানিয়েছে।

ইরান এর আগে ১৩ এপ্রিল ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সময় একই ঘাঁটি লক্ষ্য করেছিল।

প্রতিবেদন বলা হয়, নেভাতিম ঘাঁটিতে অন্তত কয়েক ডজন মিসাইল ছুড়েছে ইরান। যেগুলো একের পর এক ঘাঁটিতে আঘাত হানতে দেখা গেছে।

ভিডিওর ভূ-অবস্থান নির্ধারণ করে সিএনএন জানিয়েছে, তারা যে দুটি ভিডিও বিশ্লেষণ করেছে সেগুলোর মধ্যে একটি ধারণ করা হয়েছে আরাত আন-নাকাব শহর থেকে। এটি বিমান ঘাঁটির ঠিক দক্ষিণ দিকে অবস্থিত। ভিডিওতে যেসব ভবন দেখা গেছে; সেগুলোর সঙ্গে পুরোনো ছবির সাদৃশ্যতা খুঁজে পেয়ে সিএনএন নিশ্চিত করেছে; ভিডিওটি ঘাঁটির পাশ থেকেই ধারণ করা হয়েছে।

ভিডিওতে দেখা গেছে, আকাশের ওপর দিকে ধরা রাখা ক্যামেরায় ধরা পড়েছে কয়েক ডজন মিসাইল এই ঘাঁটির উপর পড়ছে। ওই সময় সেখানে সাইরেন বাজছিল।

ওই সময় মিসাইল ঠেকানোর একটি প্রতিরোধী মিসাইল ব্যাটারি থেকে ছুড়ছিল ইসরাইলি বাহিনী। এছাড়া ঘাঁটির কন্ট্রোল টাওয়ারও ভিডিওতে দেখা যাচ্ছিল। ঠিক তখনই ঘাঁটিতে মিসাইল পড়তে থাকে এবং সেগুলো বিস্ফোরিত হতে থাকে। এরপর ওই ঘাঁটি থেকে ধোঁয়ার কুণ্ডলি বের হওয়া শুরু করে। তখনো ঘাঁটিতে একের পর এক মিসাইল পড়ে বিস্ফোরিত হতে থাকে।

তবে ঘাঁটির কোন কোন অবকাঠামো লক্ষ্য করে মিসাইলগুলো ছোড়া হয়েছে সেটি রাতের অন্ধকারে বোঝা যায়নি বলে জানিয়েছে সিএনএন। তারা ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) কাছে এ ব্যাপারে জানতে যোগাযোগ করেও কোনো সাড়া পায়নি।

এর আগে গত ১৩ এপ্রিল ইসরাইলে মিসাইল ছুড়েছিল ইরান। সেবারও নেভাতিম বিমান ঘাঁটিকে লক্ষ্য করা হয়েছিল। তবে ওই সময় ঘাঁটির ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কম হয়েছিল।

অপরদিকে তেলআবিবে ইসরাইলি গোয়েন্দা বাহিনী মোসাদের সদরদপ্তরের অদূরে ইরানের নিক্ষেপ করা একটি ক্ষেপণাস্ত্র বিস্ফোরিত হওয়ার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে।

ভিডিওতে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র মোসাদ সদর দপ্তর থেকে এক কিলোমিটারেরও কম দূরে উত্তর-পশ্চিমে আঘাত হানতে দেখা যাচ্ছে।    সিএনএন ভিডিওটির ভৌগলিক অবস্থান (জিওলোকেটেড) যাচাই করে দেখতে পেয়েছে যে, এটি ইসরাইলি গোয়েন্দা পরিষেবার সদর দপ্তর থেকে ৩ কিলোমিটার কম দূরে হার্জলিয়ার একটি উঁচু অ্যাপার্টমেন্ট ভবন থেকে চিত্রায়িত হয়েছে।

ইসরাইলকে লক্ষ্য করে ‘বীরত্বপূর্ণ’ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় তেহরান। এতে ব্যবহার করা হয় অন্তত ২০০ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র।

বিপ্লবী গার্ডের বরাতে ইরানের রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেল জানিয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে লক্ষ্য করা হয়েছিল দখলদার ইসরাইলের বিমান ও রাডার ঘাঁটি। এছাড়া হামাস ও হিজবুল্লাহর কমান্ডারদের হত্যা পরিকল্পনার সঙ্গে যারা জড়িত ছিল তাদেরও লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হয়।

ইরান জানিয়েছে, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নিজস্ব প্রতিরক্ষা নিশ্চিতেই ইসরাইলকে লক্ষ্য করে মঙ্গলবার রাতে হামলা চালানো হয়েছে।

এদিকে ইরানের হামলার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অসংখ্য ছবি ও ভিডিও প্রকাশিত হচ্ছে। এতে দেখা যাচ্ছে, মিসাইলের আঘাতে কোথাও কোথাও গভীর খাদের সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে মিসাইলের ধ্বংসাবশেষ।