কুকি এবং মেইতেই সম্প্রদায়ের সহিংসতায় ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্য মণিপুর। থমথমে পরিস্থিতি মনিপুরের জিরিবাম জেলাসহ বেশ কয়েকটি এলাকা।
ইতোমধ্যে সংঘর্ষে উত্তরপূর্ব ভারতের এই রাজ্যটিতে আড়াইশোর বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। কয়েকদিন আগেই আরও ১৩ জনের মৃত্যুর খবর সামনে এসেছে। আর সেই পরিস্থিতিতে অশান্ত মনিপুরে অতিরিক্ত বিশ কোম্পানির সশস্ত্র কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠালো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এর মধ্যে রয়েছে ১৫ কোম্পানি সিআরপিএফ এবং ৫ কোম্পানি বিএসএফ। সবমিলিয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে রাজ্যটিতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ২১৮ কোম্পানি অর্থাৎ প্রায় তিন হাজার সশস্ত্র বাহিনী।
গত ৭ নভেম্বরের জিরিবাম জেলার জাইরন গ্রামে এক জনজাতি নারীকে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় ময়নাতদন্তের রিপোর্ট সামনে আসার পরই উত্তেজনা ছড়ায় মণিপুরে। ওই নারীর দেহের ৯৯ শতাংশ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। শরীরে ভাঙা ছিল বেশ কয়েকটি হাড়।
ওই নারীকে বাড়িতে ঢুকে সশস্ত্র হামলাকারীরা ধর্ষণ করে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ তার স্বামীর। অভিযোগ, মেইতেই সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে। ৩১ বছরের ওই নারীকে জ্যান্ত জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছিলেন তার স্বামী। মরদের ময়নাতদন্ত হয়েছিল শিলচর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে। পুলিশের হাতে সেই রিপোর্ট আসার পরই চাঞ্চল্য ছড়ায় রাজ্যটিতে।
জানা যায়, সেদিন ওই নারীকে হত্যা করার সাথেই জাইরন গ্রামের অন্তত ১৬টি বাড়িতে অতর্কিত আগুন ধরিয়ে দেয় দুষ্কৃতকারীরা। নির্যাতিতার বাড়িও জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। ভয়ে গ্রাম ছাড়ে বহু মানুষ। আশ্রয় নেয় পার্শ্ববর্তী জঙ্গলে।
ওই ঘটনার ঠিক দু-দিন পর অর্থাৎ ৯ নভেম্বর মনিপুরের বিষ্ণুপুর জেলায় মেইতেই সম্প্রদায়ের এক কৃষক নারীকে গুলি করে হত্যা করে দুষ্কৃতরা। জানা যায়, নারীটি সেই সময় জমি চাষে ব্যস্ত ছিলেন। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তার। পার্বত্য এলাকা থেকে কুকি সম্প্রদায় এমন করেছে বলে অভিযোগ করেছে মেইতেই।
প্রসঙ্গত, গত বছর মে মাস থেকে জাতিবিদ্বেষে বিপর্যস্ত মনিপুর। এখনো পর্যন্ত ২৬০ জনের মৃত্যুর খবর সামনে এসেছে। ইম্ফলসহ উপত্যকা এলাকায় রয়েছে এই মেইতেই সম্প্রদায়। যারা জনসংখ্যায় প্রায় ৫৩ শতাংশ।
অপরদিকে, জঙ্গলঘেরা পার্বত্য এলাকায় বসবাস নাগা ও কুকি সম্প্রদায়ের। যারা ৪০ শতাংশ জনসংখ্যায়। এই দুই সম্প্রদায়ের সহিংসতায় বারবার অগ্নিগর্ভে উঠছে সেখানকার পরিস্থিতি।