কমান্ডিং পুলিশ কর্মকর্তাদের ভূমিকা খতিয়ে দেখা হচ্ছে

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দিন পর্যন্ত ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে কমান্ডিং পদে থাকা পুলিশ কর্মকর্তাদের কার কী ভূমিকা ছিল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ তালিকায় রয়েছেন পুলিশের সব রেঞ্জ ডিআইজি, পুলিশ কমিশনার, ৬৪ জেলার পুলিশ সুপার, মহানগর ও জেলার সব থানার ওসি, জেলার বিভিন্ন সার্কেলের দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মকর্তা, মহানগর পুলিশের ক্রাইম জোনের ডিসি-এসি। এ ছাড়া ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় অভিযানের দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মকর্তাদের ভূমিকাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ইতোমধ্যে পুলিশের ৯ জন অতিরিক্ত আইজিসহ ঊর্ধ্বতন ১৭ কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছে অন্তর্র্বতীকালীন সরকার। এ তালিকায় আরও পুলিশ কর্মকর্তা রয়েছেন। ধাপে ধাপে তাদেরও অবসরে পাঠানো হবে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। সূত্র বলছে, ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন মহানগর, জেলা, উপজেলা ও থানা এলাকায় পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায়। কোথাও কোথাও পুলিশের সঙ্গে যোগ দেয় র‌্যাব ও বিজিবি। ১ জুলাই শুরু হওয়া কোটা সংস্কার আন্দোলন দমনে ১৮ জুলাই থেকে পুলিশ প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার শুরু করে যা চলে শেখ হাসিনার পতনের দিন অর্থাৎ ৫ আগস্ট পর্যন্ত। এতে একের পর এক ছাত্র-জনতার প্রাণহানি ঘটতে থাকে। এ সময়কালে কোথাও কোথাও পুলিশের সঙ্গে ছাত্রলীগ-যুবলীগ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরাও অংশ নেয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে যেসব পুলিশ কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট ছিলেন তাদের প্রত্যেকের দায়-দায়িত্ব নিরূপণ করে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ধাপে ধাপে এর তদন্ত প্রক্রিয়াও শুরু করা হবে। এরই অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগর পুলিশের সব থানার ওসি, ক্রাইম জোনের ডিসি, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সব ডিসি, এডিসি ও ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনারদের পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে সংযুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া ইতোমধ্যে সব রেঞ্জের ডিআইজি ও প্রায় অর্ধশত জেলার পুলিশ সুপারকে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে সংযুক্ত করা হয়েছে। বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে ঢাকা, খুলনা ও রংপুর মহানগর পুলিশ কমিশনারকে। অন্যান্য মহানগরের পুলিশ কমিশনারকে বিভিন্ন ইউনিটে সংযুক্ত করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরও পুলিশ কর্মকর্তাকে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে সংযুক্ত করা হচ্ছে। তাদের মধ্যে যাদের চাকরির বয়স ২৫ বছর হয়েছে, তাদের ধাপে ধাপে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হবে বলে সূত্র জানিয়েছে। জানতে চাইলে আইজিপি ময়নুল ইসলাম বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনকালে যেসব এলাকায় ইনসিডেন্ট হয়েছে সেগুলো আমরা খতিয়ে দেখছি- সে সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের কার কী ভূমিকা ছিল। ইতোমধ্যে এ ব্যাপারে আমাদের কাছে তথ্য এসেছে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। যেটা আপনারা দেখতে পাচ্ছেন। আমরা প্রত্যেক পুলিশ কর্মকর্তার দায়দায়িত্ব খতিয়ে দেখছি। এদিকে গ্রেপ্তার এড়াতে ঢাকার সাবেক পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ, মো. আসাদুজ্জামান, যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার, সঞ্জিত কুমার, মেহেদী হাসান, খন্দকার নুরুন্নবীসহ আরও বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা আত্মগোপনে চলে গেছেন। সম্প্রতি আত্মসমর্পণ করেছেন সাবেক মহাপুলিশ পরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনি ইতোমধ্যে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন; আন্দোলনকালে তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে কী কী ভুল ছিল, তাও জানিয়েছেন।