আগামী ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেটে দেশের রপ্তানি আয় বাড়ানোর পাশাপাশি বিশ্ব অর্থনীতির চলমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিআই বেশ কিছু সুপারিশ করেছে।
এর মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উত্তরণের পরেও বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের প্রবেশাধিকার সংরক্ষণ এবং সম্প্রসারণের লক্ষ্যে জিএসপিসহ শুল্ক-মুক্ত বাণিজ্য সহায়ক ব্যবস্থাগুলো বাড়তি সময়কাল পর্যন্ত অব্যাহত রাখাসহ বিভিন্ন অঞ্চল এবং দেশভিত্তিক মুক্তবাণিজ্য চুক্তি সম্পাদনের রোডম্যাপ সক্রিয়ভাবে বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করার সুপারিশ করেছে এফবিসিসিআই।
এছাড়াও পণ্য ও বাজার বহুমুখীকরণের মাধ্যমে রপ্তানি সম্প্রসারণ করার লক্ষ্যে বাংলাদেশের পণ্য ও সেবা রপ্তানির গন্তব্য দেশ এবং অঞ্চলগুলির সাথে বাণিজ্য সংক্রান্ত বিধিমালার সমন্বয় করা; বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, কেন্দ্রীয় ব্যাংক, কাস্টমস অথরিটি, কোয়ালিটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ড বডিসহ সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতা জোরদার করার লক্ষ্যে দ্বিপাক্ষিক সক্রিয় কর্ম-পরিকল্পনা গ্রহণ করার সুপারিশ করা হয়েছে।
সংগঠনটি জানিয়েছে, বাজেটে আন্তর্জাতিক বাজারে দেশীয় পণ্যের প্রবেশ সহজীকরণের লক্ষ্যে দেশে উৎপাদিত পণ্যের মান (স্ট্যান্ডার্ড) এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক বিধি বিধানকে আন্তর্জাতিক মান ও অন্যান্য গন্তব্য দেশের সাথে সামঞ্জস্য বিধানের (হারমোনাইজেশন) প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা; পাবলিক প্রকিউরমেন্টের অধীনে পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে নির্ধারিত মান কোড সম্পন্ন এক্রিডিটেড দেশি ও বিদেশি পণ্যকে একই সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা। সেই সঙ্গে সব দেশের জন্য অবারিত অনুরূপ সমান সুযোগ যাতে অন্যান্য দেশও বাংলাদেশকে প্রদান করে সে বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করার কথা বলা হয়েছে।
দেশে এবং বিদেশে ভোক্তাদের দ্বারপ্রান্তে পণ্য নিয়ে যেতে এসএমই খাতের রপ্তানি পণ্যের জন্য ওয়্যারহাউস এবং বিতরণ ব্যবস্থা স্থাপনের মাধ্যমে সিএমএসএমই গুলিকে বৈশ্বিক ই-কমার্সের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে সক্ষম করে তোলা। বিদেশি মুদ্রার ব্যবহারে জটিলতা এবং বিনিময় হারের ওঠানামার অস্থিতিশীলতা কাটিয়ে দক্ষ ও সাশ্রয়ী পারস্পরিক লেনদেনের সুবিধার্থে বাংলাদেশ ব্যাংকের ট্রেডিং পার্টনারদের সঙ্গে বিশেষ করে ইসিবি (ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংক), ব্যাংক অব রাশিয়া, ব্যাংক অব চায়না-এর সঙ্গে কৌশলগতভাবে নির্বাচিত (ডলার, পাউন্ড, ইউরো, ইয়েন এবং রুবল ইত্যাদি) বিভিন্ন মুদ্রা বিনিময় চুক্তি (কারেন্সি সোয়াপ) সম্পাদন করার সুপারিশ করা হয়েছে।
এফবিসিসিআইয়ের সুপারিশে বলা হয়েছে, ব্যয়বহুল তৃতীয় ব্যাংক গ্যারান্টির পরিবর্তে লেনদেনকারী ব্যাংকের মধ্যে সুবিধাজনক ও সম্মত আর্থিক মেসেজিং সিস্টেমগুলি ব্যবহার করে সরাসরি অ্যাকাউন্ট খোলার মাধ্যমে পারস্পরিক সম্মত মুদ্রায় দ্বিপাক্ষিক লেনদেন করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা; আমদানি-রপ্তানি পরিকাঠামো ব্যবস্থাপনা বিষয়ক কার্যক্রম সমগ্র বিশ্বের মতো দ্রুত উন্নয়নশীল বাংলাদেশের জন্য একটি আবশ্যিকভাবে পরিপালনীয় যৌথ আমদানি-রপ্তানি আদেশের মাধ্যমে স্থায়ী, নির্ভরযোগ্য, ব্যবসাবান্ধব, সহজ, সরল এবং সমন্বিত আমদানি ও রপ্তানি ব্যবস্থা কার্যকর করা; দেশি এবং বিদেশি বাজারমুখী সামগ্রিক উৎপাদনশীল শিল্প খাতের বণ্ড সুবিধাসহ শিল্প সহায়ক যাবতীয় সুযোগ সুবিধা সব খাতের জন্য অবারিত করে বিশ্ব সরবরাহ চেইনে সংযুক্ত করা।
এতে বলা হয়েছে, আমদানি-রপ্তানি সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম বাস্তবায়নে নিয়োজিত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসহ জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক ফোকাল পয়েন্ট এবং সিঙ্গেল উইন্ডো ব্যবস্থা কার্যকর করা; বিশ্ব-বাণিজ্য সংস্থার নিয়মাধীনে বাণিজ্য সহায়ক নিম্নলিখিত প্রণোদনার আলোকে আর্থিক, কর, শুল্ক ও অন্যান্য প্রণোদনা কার্যক্রম বাস্তবায়ন এবং তদারক করা।
আমদানি শুল্ক এবং পরোক্ষ কর থেকে রপ্তানিকৃত পণ্যকে অব্যাহতি; পণ্য রপ্তানি করা হলে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত পণ্যের আমদানি শুল্ক এবং পরোক্ষ কর থেকে অব্যাহতি; রপ্তানি পণ্যের উৎপাদন বর্জ্য রপ্তানি বা বর্জন করা হলে আমদানি শুল্ক এবং পরোক্ষ কর থেকে অব্যাহতি; এসইজেড-এ সঞ্চিত পণ্য শুল্ক ও পরোক্ষ কর থেকে অব্যাহতি; এবং সব উৎপাদনমুখি এবং রপ্তানি খাতকে বন্ডেড ওয়্যার-হাউজ সুবিধা সম্প্রসারণ করে বিশ্ব বানিজ্য সংস্থার নীতিমালার সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ প্রণোদনা আগামী ২০২৬ এর মধ্যে ক্রমান্বয়ে বিলোপ করে সংগতিপূর্ণ অন্যবিধ ব্যবস্থাদি গ্রহন করা। সেই সঙ্গে রপ্তানিমুখী গ্রামীণ ও ক্ষুদ্র শিল্প এবং নারী উদ্যোক্তাদের সমন্বয়ে খাতভিত্তিক রপ্তানিকারক এবং উৎপাদনশীল প্রতিষ্ঠানগুলিকে যৌথ ব্যবস্থাপনায় বন্ডেড ওয়্যার হাউজ সুবিধা প্রদান করা।
এফবিসিসিআইয়ের সুপারিশে বলা হয়েছে, বাজেট বরাদ্দ এবং দাতা সংস্থা কর্তৃক প্রদেয় সহায়তায় সব উৎপাদনশীল এবং রপ্তানি খাতে ১-২% সাশ্রয়ী সুদের হার নির্ধারিত করা। কারিগরি সক্ষমতা, দক্ষতা, উৎপাদনশীলতা উন্নয়নসহ পণ্য বা সেবার বাজার উন্নয়নে কারিগরি এবং আর্থিক সহায়তা কার্যক্রম বাস্তবায়ন এবং তদারক করা। পণ্যে এবং সেবা খাতের আন্তর্জাতিক গুণগত এক্রিডিটেড মানসনদ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় আর্থিক ও অন্যান্য সহায়তা প্রদান করা; রপ্তানি পণ্যের আন্তর্জাতিক মেধাস্বত্ব নিবন্ধনের জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক ও অন্যান্য সহায়তা প্রদান করার মাধ্যমে বাংলাদেশের পণ্যে এবং সেবার বাজার সংরক্ষণ ও মূল্য সংযোজন ত্বরান্বিত করা; রপ্তানি হাউজ বা এক্সপোর্ট হাউজ প্রতিষ্ঠা করে ছোট ছোট উদ্যোক্তাদের সহায়তা করা। পণ্যে বিদ্যমান উৎসে করের হার ১% হতে কমিয়ে ০.২৫% করা।