নতুন উপদেষ্টার সন্ধানে সরকার, জাফর উদ্দীন হতে পারেন বাণিজ্য উপদেষ্টা

দ্রব্যমূল্য বাড়ছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে চলছে নানা সমস্যা। অবস্থা সামাল দিতে নানা জটিলতার মুখোমুখি হচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ একই সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়। এছাড়া তিনি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়েরও দায়িত্ব পালন করছেন। ফলে দেশের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় সামাল দেওয়া তার পক্ষে কঠিন হয়ে পড়েছে।

এ অবস্থায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জন্য একজন নতুন উপদেষ্টা খোঁজা হচ্ছে বলে জানা গেছে। আর এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেতে পারেন সাবেক কোনো সচিব অথবা দেশের শীর্ষ কোনো ব্যবসায়ী। এক্ষেত্রে অবসরপ্রাপ্ত কোনো সচিবকে এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীনের নাম পছন্দের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র জানায়,বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীকে অনানুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন এমন একজন সাবেক সচিবকেও মন্ত্রণালেয়ের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক এক সচিব অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে তার কার্যালয়ে দেখা করেন। মনে করা হচ্ছে সে সময় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

এছাড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য দুটি বড় শিল্পগোষ্ঠীর কর্ণধারদের অনুরোধ করা হয়েছে। এদের একজন জানিয়েছেন, তার পক্ষে এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সামলানো সম্ভব হবে না। অন্যজন তার মতামত এখন পর্যন্ত জানাননি।

তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক যে সচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে, তিনি এই দায়িত্ব নেওয়ার বিষয়ে সম্মতি জানিয়েছেন। তবে এর বাইরে আরও দুজন সাবেক আমলার নামও এই মন্ত্রণালয়ের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি মাসের মধ্যেই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জন্য একজন নতুন উপদেষ্টা নিয়োগ চূড়ান্ত হতে পারে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব রয়েছেন ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি আরও দুটি মন্ত্রণালয়েরও দায়িত্বে রয়েছেন। এর একটি হচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয় এবং অন্যটি হচ্ছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। ২০২৪ সালের ১৬ আগস্ট পর্যন্ত তিনি অর্থের পাশাপাশি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে ১৬ আগস্ট পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পরিবর্তে তাকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর ২৭ আগস্ট আরও একটি মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবেও ড. সালেহউদ্দিনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

সূত্র জানায়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের সামলানোর পর অন্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করা যেকোনো মন্ত্রী বা উপদেষ্টার জন্য কঠিন। এর মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মতো একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের সামলানো বেশ কঠিন। এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার দেড় মাসের মধ্যে ড. সালেহউদ্দিন সব মিলিয়ে তিন থেকে চার দিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অফিস করতে পেরেছেন। কাজের চাপে সপ্তাহের পাঁচ দিন তাকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অফিসে বসতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কাজের বিষয়ে তার মনোযোগ দেওয়া অনেকটা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এই মন্ত্রণালয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ।বাজার নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম যখন বেড়ে যায় তখন সবাই এই মন্ত্রণালয়কে দোষারোপ করে। বর্তমান বাজারে বেশ কয়েকটি পণ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। বিশেষ করে ডিমের কথাই ধরা যাক, এই পণ্যটি এখন পুরোপুরি সিন্ডিকেটের কবলে চলে গেছে। কিন্তু সিন্ডিকেট ভাঙার জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ আমরা নিতে পারছি না। যদি ভোক্তা অধিদফতরের মাধ্যমে কিছু বাজার তদারকি করা হচ্ছে। কিন্তু সেটিও বাজারে কোনো প্রভাব রাখতে পারছে না। এখানে বাজার তদারকির অভাব রয়েছে। বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করার প্রয়োজন, কিন্তু সেটিও করা যাচ্ছে না। ফলে পুরো বাজার ব্যবস্থা এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় বাজার সম্পর্কে ওয়াকিবহাল কাউকে এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।