মাসুম বিল্লাহ, কুয়েত থেকেঃকুয়েতের ভিসা ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা মূল্যে বিক্রি হচ্ছে। লাগামহীন এই ভিসা ব্যবসায় নেই কারো নিয়ন্ত্রণ। অন্যদিকে লামানা প্রথা,অর্থাৎ বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ অনুমোদন এর প্রয়োজন “এই নিয়মটিও বাতিল করে সহজ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভিসা পাওয়াও নিশ্চিত করা যাচ্ছে না”।
গত আওয়ামী সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি কুয়েত সফর করেছেন। সেসময় স্থানীয় প্রবাসী বাংলাদেশি সংবাদকর্মীরা ওইসব বিষয় তাদের জানিয়েছেন,তবু্ও প্রত্যাশানুযায়ী এর সুফল পাওয়া যায়নি।
গত দুই সপ্তাহ আগে কুয়েত সফর করে গেছেন বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। এবারও প্রবাসী সংবাদকর্মীরা প্রবাসীদের নানা সমস্যার পাশাপাশি চড়া মূল্যে ভিসা বিক্রি ও লামানা প্রথা নিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলেন।
এসময় পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ভিসা সিন্ডিকেট এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট লোকদের সংখ্যা জানতে চান এবং এদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ নিয়ে আলোচনা করেন তিনি।
কুয়েতে ভিসা ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেক প্রবাসীরা রয়েছেন। এদের রুজিরোজগার ওই ব্যবসার ওপর নির্ভরশীল।
কুয়েত প্রবাসী কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার শাহালম আহমদ জানান, “ভিসা ব্যবসায় জড়িত সব লোক খারাপ” সেটি বলা যাবেনা, অনেকে আছেন সামান্য লাভে ভিসা বিক্রি করেন। আবার অনেকে আছেন অত্যাধিক লাভে ভিসা বিক্রি করেন,পাশাপাশি জাল ভিসা দিয়ে প্রতারণা তো রয়েছেই।
নারায়ণগঞ্জ এর রহমত উল্লাহ বলেন, কিছুদিন আগে কুয়েতে ভিসা ব্যবসা ও মানি লন্ডারিং মামলায় স্থানীয় প্রশাসনের হাতে গ্রেফতার হন বেদু ফিরোজ নামে একজন বড়মাপের ভিসা ব্যবসায়ী। পরে ওই ভিসা দালালকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয় কুয়েত প্রশাসন।
রহমত উল্লাহ বলেন, এছাড়াও জাহাঙ্গীর হোসেন পাটোয়ারী নামে একজন প্রবাসীর বিরুদ্ধে রয়েছে অন্তহীন অভিযোগ।
ওই প্রবাসী ভিসা বিক্রি এর পাশাপাশি নানা ধরনের অবৈধ কাজের সাথে জড়িত রয়েছেন।
তিনি বলেন, কুয়েতে বহু প্রবাসীদের নিঃস্ব করা এবং প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের বহুল সমালোচিত একজন ব্যক্তি জাহাঙ্গীর।
বর্তমানে কুয়েতে ভিসা ব্যবসায়ীদের গুরু হিসেবে পরিচিত ওই ব্যক্তি ভিসা ব্যবসায় তালিকার শীর্ষে হলে ,২০১৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস অনুষ্ঠানে কুয়েতে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এস এম আবুল কালাম বাংলাদেশি কমিউনিটির সকল উপস্থিতিদের সামনে তা প্রকাশ করেন l
সেই সময়ে কুয়েত সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণার মাধ্যমে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলে এই অবস্থার সৃষ্টি হয় এবং অনেকেই জেলে যান কিন্তু কথিত জাহাঙ্গীর হোসেন পাটোয়ারী আওয়ামীলীগ সরকারের রাঘব বোয়ালদের সাথে হাত মিলিয়ে দূতাবাসে মোটা অংক দিয়ে পুরো বিষয়টাকে ধামাচাপা দিয়ে রাখেন।
রহমত উল্লাহ আরও বলেন, জাহাঙ্গীর হোসেন পাটুয়ারীর ছোট ভাই জামাল পাটোয়ারী কুয়েতে সর্বজন স্বীকৃত একজন অসাধু ভিসা প্রতারক হিসেবে চিহ্নিত, তাদের জালিয়াতি ভিসা এবং লেনদেন করে অনেকেই হয়েছেন নিঃস্ব অথচ সেই জাহাঙ্গীর পাটোয়ারী কুয়েতস্থ দূতাবাসের তৎকালীন ডিফেন্স এটাচি ব্রিগ জেন (অবঃ) মোঃ নাসিমুল গনির হাত ধরে বাংলাদেশ সেনাকল্যাণ সংস্থাতে গাড়ির লুব্রিকেন্ট সরবরাহ করার চুক্তিতে আবদ্ধ হন।
অত্যন্ত চতুর এবং অর্ধ শিক্ষিত এই ব্যক্তি ”বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সদস্য”
তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশন ও সরকারের অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন সংস্থার প্রতি সবিনয় আবেদন জানিয়েছেন কুয়েতে জাহাঙ্গীর হোসেন পাটুয়ারীর ভিসা প্রতারণায় বিপদগ্রস্ত প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
কুয়েত প্রবাসী কুমিল্লার জাহাঙ্গীর হোসেন পাটোয়ারী, কুয়েতে বাংলাদেশ কমিউনিটি একাংশ সংগঠনের স্বঘোষিত সভাপতি ও কুয়েত আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা।